NotesWhat is notes.io?

Notes brand slogan

Notes - notes.io

বারযাখের জীবন সিরিজ: পর্ব ০১
.
#ভূমিকা
মৃত্যু এক অনস্বীকার্য বাস্তবতা। অবিশ্বাসীদের সব পার্থিব চাকচিক্যের আশা ভরসা চুরমার হয় এই বাস্তবতার নির্মম আঘাতে। আল্লাহ বলেন,
.
"যখন তাদের কারও কাছে মৃত্যু আসে, তখন সে বলে, 'হে আমার পালনকর্তা! আমাকে পুনরায় (দুনিয়াতে) প্রেরণ করুন, যাতে আমি সেসব সৎকর্ম করতে পারি, যা আমি করিনি।' কখনোই নয়! এ তো তার একটি কথার কথা মাত্র। তাদের সামনে পর্দা (বারযাখ) আছে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত।" (সূরা মুমিনুন ২৩:৯৯-১০০)
.
#মৃত্যুর_আগমন
একজন সত্যিকার মুমিনের চাওয়া হলো আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করা। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "আল্লাহর সাক্ষাত লাভ করাকে যে ভালোবাসে, তার সাক্ষাতকে আল্লাহ ভালোবাসেন। আল্লাহর সাক্ষাত লাভ করাকে যে ঘৃণা করে, তার সাক্ষাতকে আল্লাহ ঘৃণা করেন।"
.
এটা শুনে মা আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, "কিন্তু আমরা তো মৃত্যুকে অপছন্দ করিই।" রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, "এর অর্থ এটা নয়। মুমিনের মৃত্যু যখন আগত হয়, তখন তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নিয়ামাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়। আসন্ন বিষয়গুলো তখন তার প্রিয় হয়ে যায়। সে আল্লাহর সাক্ষাত ভালোবাসে, আল্লাহ তার সাক্ষাত ভালোবাসেন। আর কাফিরের মৃত্যু আগত হলে তাকে আল্লাহর আযাবের দুঃসংবাদ দেওয়া হয়। তখন আসন্ন বিষয়গুলো তার অপ্রিয় হয়ে যায়। সে আল্লাহর সাক্ষাত ঘৃণা করে, আল্লাহও তার সাক্ষাত ঘৃণা করেন।" (বুখারি ও মুসলিম)
.
মুমিনের জান কবজ করতে আল্লাহ ইতস্তত করেন! আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি বান্দার আনুগত্যের অনুপাতে আল্লাহ বান্দাকে ভালোবাসেন। বুখারির একটি হাদীসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, "যে আমার কোনো বন্ধু (ওয়ালি) এর ক্ষতি করে, তার বিরুদ্ধে আমি যুদ্ধ ঘোষণা করি। বান্দা ফরজ ইবাদাতগুলোর মাধ্যমে আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়। তারপর সে নফল ইবাদাতগুলোর মাধ্যমে আমার নিকটবর্তী হতে থাকে। একসময় সে আমার প্রিয়পাত্র হয়ে যায়। যখন সে আমার প্রিয়পাত্র হয়, তখন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই যা দিয়ে সে দেখে। আমি তার হাত হয়ে যাই যা দিয়ে সে আঘাত করে। আমি তার পা হয়ে যাই যা দিয়ে সে হাঁটে। সে আমার কাছে কিছু চাইলে আমি তা দান করি। সে আমার আশ্রয় চাইলে আমি তাকে আশ্রয় দেই। মুমিন বান্দার জান কবজ করার মতো ইতস্তত বোধ আমি অন্য কোনো কাজে করি না। সে মৃত্যু অপছন্দ করে, আর আমি তাকে ব্যথা দিতে অপছন্দ করি।"
.
শয়তান আমাদের দ্বারা গুনাহের কাজ করাতে খুব তৎপর থাকে। মৃত্যু হলো তার জন্য গুনাহ করানোর শেষ সুযোগ। কোনো বান্দার মৃত্যুর সময়ে শয়তান উপস্থিত হয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে যেন মৃত্যুপথযাত্রীর জীবনটা আল্লাহর নাফরমানি দিয়ে শেষ হয়।
.
মৃত্যুর আগমন ঘটে প্রচুর যন্ত্রণা নিয়ে। নবীগণও এ থেকে রেহাই পান না। আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। নিশ্চয় মৃত্যু আসে যন্ত্রণাসহকারে।" (বুখারি এবং আহমাদ)
.
মৃত্যুর লক্ষণ উপস্থিত হওয়া মানে তাওবাহর দরজা বন্ধ। ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "আল্লাহ যখন ফিরাউনকে ডুবিয়ে দিলেন, সে বললো 'আমি ঈমান অানলাম যে, বনী ইসরাইল যেই রবের উপর ঈমান এনেছে তিনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই।' জিবরীল আলাইহিসসালাম বলেন, 'হায় মুহাম্মাদ, আপনি যদি দেখতেন কীভাবে আমি তার মুখে মাটি ঠেসে দিয়েছি এই ভয়ে যে রহমত তাকে স্পর্শ করে ফেলবে।" (আহমাদ ও তিরমিযি)
.
কবর হলো আখিরাতের প্রথম ঘাঁটি। উসমান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু কবরের সামনে দাঁড়ালে এত কেঁদে দাড়ি ভিজিয়ে ফেলতেন, যে জান্নাত-জাহান্নামের কথা স্মরণ করেও তিনি এত কাঁদতেন না। তিনি বলেন, "নিশ্চয় আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি 'কবর হলো আখিরাতের প্রথম ঘাঁটি। যে এটি সহজে পার হয়ে যাবে, তার জন্য পরের ঘাঁটিগুলোও সহজ হবে। আর যে এটি সহজে পার হতে পারবে না, তার পরের ঘাঁটিগুলোও কঠিন হবে।" (তিরমিযি)
.
(চলবে ইনশাআল্লাহ...)
.
সহায়ক গ্রন্থ: আল-হায়াত ফিল বারযাখ (শায়খ মুহাম্মাদ আল-জিবালি)




বারযাখের জীবন সিরিজ: পর্ব ০২
.
#কুরআন_হাদীস_থেকে_বারযাখের_বর্ণনা
.
১। বারা ইবনে আযিব রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুপরবর্তী সময়ের এক দীর্ঘ বর্ণনা দেন। সারাংশ এমন: মুমিন বান্দার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে উজ্জ্বল চেহারার ফেরেশতারা জান্নাতি কাপড় ও সুগন্ধি নিয়ে তার দৃষ্টিসীমায় হাজির হয়। জানকবজকারী ফেরেশতা এসে তার রুহকে বের হয়ে আসতে আহ্বান করে। পানির মশক থেকে পানি বের হওয়ার মতো রুহ সহজে বের হয়ে আসে। মউতের ফেরেশতার কাছে অল্প সময়ই রুহ থাকে। ফেরেশতারা সেই রুহকে জান্নাতি কাপড় ও সুগন্ধি দিয়ে জড়িয়ে উপরে নিয়ে যায়। সকল ফেরেশতাগণ তার জন্য দুআ করতে থাকে। আসমানের দরজাগুলো তার জন্য খুলতে থাকা হয়। সব ফেরেশতাগণই আল্লাহর কাছে দুআ করে যেন এই রুহ তাদের কাছ দিয়ে যায়। তার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয় এই পুণ্যাত্মা কে। সাথের ফেরেশতারা জবাব দেন "এ অমুকের সন্তান তমুক।" সপ্তম আসমানে নেওয়ার পর আল্লাহ আদেশ দেন এই রুহের আমলনামা 'ইল্লিয়্যুন'এ রাখার জন্য। সূরা মুতাফফিফীনের ১৯-২১ আয়াত দ্রষ্টব্য।
.
তারপর সেই রুহকে আবার দেহে ফিরিয়ে আনা হয়। সে তার কবরের কাছ থেকে আত্মীয়দের চলে যাওয়ার পদধ্বনি শোনে। তারপর বিকট দর্শন মুনকার নাকির এসে তাকে ঝাঁকানি দেয়। তাকে উঠে বসিয়ে তার রব, দ্বীন ও তার কাছে প্রেরিত ব্যক্তি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। সে যথাক্রমে আল্লাহ, ইসলাম ও রাসূলের কথা বলে। তারপর জিজ্ঞাসা করা হয় সে কী করেছিলো। সে বলে যে সে আল্লাহর কিতাব পড়ে তা বিশ্বাস ও মান্য করেছে। তারপর তাকে আবার ঝাঁকি দয়ে তার রব, দ্বীন ও নবী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়। সে জবাব দেয়। এটাই বান্দার উপর আপতিত শেষ ফিতনা (পরীক্ষা)। এরপর আসমান থেকে ঘোষণা করা হয়, "আমার বান্দা সত্য বলেছে।" তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দিয়ে, জান্নাতি পোশাক ও সুগন্ধি সরবরাহ করতে বলা হয়। তার কবরকে তার দৃষ্টিসীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেওয়া হয়।
.
তারপর সুন্দর চেহারার, সুন্দর কাপড় পরিহিত, সুবাস মাখা এক ব্যক্তি আসে। সে হচ্ছে ওই ব্যক্তির নেক আমল। সে বলে, "আল্লাহর কসম! আমি তো তোমাকে আল্লাহর আনুগত্যে দ্রুত করতে দেখেছি। আর আল্লাহর অবাধ্যতায় দেরি করতে দেখেছি। আল্লাহ তোমায় উত্তম প্রতিদান দিন।" কবরে জান্নাব ও জাহান্নাম দেখিয়ে বলা হয় "তুমি আল্লাহর অবাধ্যতা করলে এই আগুনে থাকতে। কিন্তু আল্লাহ তোমাকে এর বদলে এই (জান্নাত) দিয়েছেন।" সে এসব দেখে দুআ করতে থাকে যেন তাড়াতাড়ি কিয়ামাত হয়ে যায় যাতে সে তার পরিবার ও সম্পত্তির সাথে পুনর্মিলিত হতে পারে। তাকে শান্ত হতে বলা হয়।
.
অনুরূপে পাপাচারী বান্দার জান কবজের সময় ভীষণ চেহারার ফেরেশতারা জাহান্নাম থেকে দুর্গন্ধী কাপড় এনে হাজির হয়। মউতের ফেরেশতা রুহকে হুকুম দেয় আল্লাহর আযাবের পানে বেরিয়ে আসতে। রুহ দেহের ভেতর ছোটাছুটি করতে থাকে। মউতের ফেরেশতা ভেজা তুলা থেকে কাঁটস বের করার মত টেনে রুহ বের করেন। ফলে ওই বান্দার রগগুলো ছিঁড়ে যায়।
.
সকল ফেরেশতারা তাকে লানত দিতে থাকে। সকলে আল্লাহকে বলে এই রুহ যেন তার দিক দিয়ে না যায়। ফেরেশতারা জাহান্নামের কাপড়ে পেঁচিয়ে তাকে উপরে নিতে থাকে। আসমানের অধিবাসীরা দেখে বলে "এই পাপাত্মা কে?" বলা হয় "অমুকের সন্তান তমুক।" দুনিয়ায় তাকে যত খারাপ নামে ডাকা হতো সেসব ধরে তাকে ডাকা হয়। আসমানের দরজাগুলো তার জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়।
.
"নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা বলেছে এবং এগুলো থেকে অহংকার করেছে, তাদের জন্যে আকাশের দ্বার উম্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। যে পর্যন্ত না সূচের ছিদ্র দিয়ে উট প্রবেশ করে।" (সূরা আ'রাফ ৭:৪০)
.
তার আমলনামা সিজ্জিনে রাখা হয়। তারপর তার রুহ তার দেহে ফেলে দেওয়া হয়। একইভাবে মুনকার নাকির তাকে প্রশ্ন করে। সে জবাব দিতে ব্যর্থ হয়। তার জন্য কবরে জাহান্নামি উত্তাপের ব্যবস্থা করা হয়। আর কবর সংকুচিত হয়ে গিয়ে তার পাঁজর ভাঙতে থাকে।
.
বিশ্রী চেহারা, বিশ্রী কাপড় ও দুর্গন্ধময় এক ব্যক্তি তার সামনে আসে। সে হলো তার বদ আমল। এক বধির ব্যক্তিকে তার শাস্তির জন্য নিযুক্ত করা হয়। সে হাতে বিরাট এক মুগুর ধারণ করে যা দিয়ে পাহাড়ে আঘাত করলে পাহাড় গুঁড়ো হয়ে যেতো। এই মুগুর দিয়ে তাকে আঘাত করা হয়। ফলে সে গুঁড়ো হয়ে যায়। আল্লাহর আদেশে সে আবার আগের মতো হয়ে যায়। এভাবে শাস্তি চলতে থাকে। সে দুআ করতে থাকে যেন কখনোই কিয়ামাত না হয়।
.
হাদীসটি আহমাদ, আবু দাউদ ও অন্যান্য কিতাবে আছে।
.
(চলবে ইনশাআল্লাহ...)
.
সহায়ক গ্রন্থ: আল-হায়াত ফিল বারযাখ (শায়খ মুহাম্মাদ আল-জিবালি)






বারযাখের জীবন সিরিজ: পর্ব ০৩
.
# কুরআন_হাদীস_থেকে_বারযাখের_বর্ণনা (চলমান)
.
২। আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে মোটামুটি একই বর্ণনা এসেছে। অতিরিক্ত উল্লেখ আছে যে নেককার ব্যক্তি কবরের সওয়াল জওয়াবের সময় কোনো ভীতি অনুভব করবে না। আর পাপাচারী ব্যক্তি ভীতি অনুভব করবে। যেসব প্রশ্ন করা হবে তার মাঝে অতিরিক্ত উল্লেখ আছে "তুমি আল্লাহকে দেখেছো কি?" নেককার ব্যক্তি বলবে "(দুনিয়ার জীবনে) আল্লাহকে দেখা সম্ভব নয়।" হাদীসটি ইবনে মাজাহ গ্রন্থে আছে।
.
৩। আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার কাছে এক ইয়াহুদী ভিখারিনী এসে বলে, "আমাকে কিছু খেতে দাও। আল্লাহ যেন তোমায় দাজ্জালের ফিতনা ও কবরের আযাব থেকে বাঁচান।" রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফিরে এলে আয়িশা তাঁকে ওই ভিখারিনীর বলা কথাগুলো জানান। রাসূলুল্লাহ দাঁড়িয়ে হাত তুলে দাজ্জালের ফিতনা ও কবরের আযাব থেকে বাঁচার দুআ করেন।
.
তারপর আয়িশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহাকে বলেন যে প্রত্যেক নবীই দাজ্জালের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে অতিরিক্ত আরো জানান যে দাজ্জাল এক চোখ কানা হবে অথচ আল্লাহ কানা নন (যেহেতু দাজ্জাল নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করবে) এবং দাজ্জালের দু চোখের মাঝে 'কাফির' লেখা থাকবে যা প্রতিটি মুমিন পড়তে পারবে।
.
তারপর কবরের আযাবের ব্যাপারে পূর্বের হাদীসের মতো মোটামুটি একই বর্ণনা এসেছে। হাদীসটি মুসনাদ আহমাদ গ্রন্থে সংকলিত।
.
৪। আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আরেকটি হাদীসে অতিরিক্ত এসেছে যে মুমিনের রুহকে আসমানে নেওয়ার সময় পূর্বেকার মুমিনদের রুহের সাথ দেখা করানো হয়। তারা তাকে পেয়ে খুশি হয়। কেউ জিজ্ঞাসা করে "অমুকের কী হয়েছে?" আরেকজন বাধা দেয়, "ওকে বিশ্রাম নিতে দাও। সে তো দুনিয়ার দুঃখ কষ্টে ছিলো।" তবু ওই মুমিন উত্তর দেয়, "সে তো মারা গিয়েছিলো। সে কি তোমাদের নিকট আসেনি?" ফেরেশতারা জবাব দেয় "তাকে এক তলাবিহীন গর্তে (জাহান্নাম) নেওয়া হয়েছে।" ইবনে হিব্বান ও ইবনে মাজাহ গ্রন্থে হাদীসটি আছে।
.
৫। তিরমিযি গ্রন্থে সংকলিত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদীসে আছে যে কবরে সওয়ালকারী ফেরেশতাদ্বয় কালো ও নীল রঙের হবেন। একজনের নাম মুনকার, আরেকজনের নাম নাকির।
.
৬। আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে আছে মৃত ব্যক্তি তার কবরের কাছ থেকে আত্মীয়দের চলে যাওয়ার পদধ্বনি শুনতে পায়। তারপর মুনকার নাকির সওয়াল শুরু করেন। জিজ্ঞাসা করা হয়, "তুমি এই ব্যক্তির ব্যাপারে কী বলতে?" মুমিন জওয়াব দেয়, "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।" তার কবরে তখন জান্নাতি নায নিয়ামাত দেওয়া হয়।
.
একই প্রশ্নের উত্তরে কাফির মুনাফিকরা বলে, "লোকে যা বলতো আমিও তা বলতাম। তবে আমার জানা ছিলো না।" তাকে বলা হয়, "তুমি জানতেও না, তুমি (কুরআন) পড়োওনি।" তারপর তার কানের মাঝে মুগুর দিয়ে আঘাত করা হয়। এতে সে এমন এক চিৎকার দেয় যা জিন ও মানুষ ছাড়া সকল প্রাণী শুনতে পায়।" বুখারি, মুসলিম ও আবু দাউদে হাদীসটি আছে।
.
(চলবে ইনশাআল্লাহ...)
.
সহায়ক গ্রন্থ: আল-হায়াত ফিল বারযাখ (শায়খ মুহাম্মাদ আল-জিবালি)






বারযাখের জীবন সিরিজ: পর্ব ০৪
.
#মুমিন_কাফির_ও_গুনাহগার
.
উল্লেখিত হাদীসগুলোতে কেবল মুমিন আর কাফিরের অবস্থা বলা হয়েছে। গুনাহগার মুমিনের কথা বলা হয়নি। ধরে নেওয়া যায় এখানে এমন সব মুমিনদের কথাই বলা হয়েছে যাদের নেক আমলের পাল্লা তাদের বদ আমলের পাল্লার চেয়ে ভারী।
.
আর যেসব মুমিনের গুনাহের পাল্লা নেকির পাল্লার চেয়ে ভারী, তাদের ব্যাপারে বলা যায় হয়তো তাদের কবরে আযাব হবে। হয়তো কিয়ামাতের পর সাময়িকভাবে জাহান্নামেও যাবে। কিন্তু সুন্নাহয় তাদের শাস্তির বর্ণনা বিস্তারিত নেই। তবুও সামনের আলোচনায় গুনাহগারদের বারযাখি জীবন সংক্ষেপে আলোচিত হবে।
.
বারযাখের ব্যাপারে আরো কিছ আয়াত ও হাদীসের সারসংক্ষেপ উল্লেখ করা হলো:
.
মুসনাদ আহমাদে ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদীসে আছে মুমিনের রুহ আল্লাহর হামদ ঘোষণা করতে করতে দেহ ত্যাগ করে।
.
মুসলিম ও অন্যান্য কিতাবে উম্মু সালামা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত এক হাদীসে পাওয়া যায় যে, দৃষ্টিশক্তি রুহকে অনুসরণ করে। অর্থাৎ রুহের সাথে সাথে মানুষের দৃষ্টিশক্তিও চলতে থাকে। তার সাথে ঘটা ঘটনাগুলো সে দেখতে পায়।
.
সূরা আনআমের ৯৩ নং আয়াতে সেসব লোকের ব্যাপারে বলা হয়েছে যারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করতো অথবা ওয়াহী পাওয়ার মিথ্যা দাবি করতো। মউতের ফেরেশতা হাত বাড়িয়ে তাকে আত্মা বের করার হুকুম দেয় আর অবমাননাকর শাস্তির দুঃসংবাদ শোনায়।
.
কবর যে মৃতকে চাপ দেয়, তা থেকে কেউ রেহাই পাবে না। সকলকেই কবর চাপ দেবে। তবে কিছু আসার থেকে জানা যায় যে সবার ক্ষেত্রে এই চাপের ভয়াবহতা সমান নয়। নেককাররা অল্পতেই পার পেয়ে যাবে। তাবারানিতে উল্লেখিত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণিত এক হাদীসে এসেছে যে কেউ যদি কবরের চাপ থেকে রেহাই পেতো, তিনি হতেন সাদ বিন মুয়াজ। তবে কবর তাঁকে একবার চাপ দিয়েছে। তারপর তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
.
কবরের নিকট থেকে লোকেরা চলে যাওয়ার পরই প্রশ্নোত্তর শুরু হয়। মুসলিমের এক বর্ণনায় আছে আমর বিন আস রাদ্বিয়াল্লাহু মৃত্যুশয্যায় ছিলেন। তিনি অন্য সাহাবাদের বলেন তাঁরা যেন উট জবাই করে তার গোস্ত বিতরণ করতে যত সময় লাগে, ততক্ষণ তাঁর কবরের নিকট দাঁড়ান। এতে তাঁর শান্তি লাগবে এবং তিনি সওয়াল জওয়াবের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবেন।
.
সূরা ইবরাহীমের ২৭ আয়াতে আল্লাহ বলেছেন যে তিনি মুমিনদেরকে মজবুত কথা দিয়ে মজবুত করেন। এর একটি ব্যাখ্যা হলো মুমিনের কবরের সওয়াল জওয়াব আল্লাহ সহজ করে দেন। বুখারির একটি হাদীস থেকে এ ব্যাখ্যা জানা যায়।
.
কবরের জীবনে দুনিয়ার জীবনের মতই বুদ্ধি বিবেচনা সজীব থাকে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথা বলার পর তা শুনে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, "তাহলে আমি তার (সওয়ালকারী ফেরেশতার) মুখে পাথর ছুঁড়ে মারবো।" (আত তারগিব ওয়াত তাহরিব) এটি একটি আরবি বাচনভঙ্গি যার অর্থ অসাধারণ জবাব দিয়ে চুপ করিয়ে দেওয়া।
.
(চলবে ইনশাআল্লাহ...)
.
সহায়ক গ্রন্থ: আল-হায়াত ফিল বারযাখ (শায়খ মুহাম্মাদ আল-জিবালি)
.
#BarzakhErJibon
#HujurHoye






বারযাখের জীবন সিরিজ: পর্ব ০৫
.
#আত্মাগুলো_কোথায়?
.
পূর্বে উল্লেখিত হাদীসগুলোতে দেখা গেছে রুহগুলো আসমানে নিয়ে তাদের আমলনামা ইল্লিয়্যুন বা সিজ্জিনে রেখে রুহকে আবার দেহে ফিরিয়ে আনা হয়। আবার এক হাদীসে আছে শহীদদের আত্মা জান্নাতে সবুজ পাখির অন্তরে থেকে সেখানের ফলপাকড় খেয়ে বেড়ায়। আবার মূসা আলাইহিসসালামকে রাসূল সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখেছেন কবরের ভেতর ইবাদাতে মগ্ন। সেই একই মূসা আলাইহিসসালামের সাথে মিরাজের সময় ষষ্ঠ আসমানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখা হয়।
.
এসব বর্ণনার মাঝে আসলে কোনো বৈপরীত্য নেই। কারণ এগুলো গায়েবের বিষয়। সেখানকার আকৃতি, মাত্রা ইত্যাদি কিছুই আমরা জানি না। গর্ভে থাকা সন্তানের কাছে যেমন দুনিয়ার সকল বিষয় অকল্পনীয়। রুহের সাথে দেহের যোগাযোগ থাকা, আবার একই সময়ে সেই রুহ আসমানে বা জান্নাতে থাকা অবশ্যই সম্ভব। আমাদের জানা প্রাকৃতিক নিয়মগুলো আল্লাহর সৃষ্টি। বারযাখের জীবনের বিশেষ প্রাকৃতিক নিয়মগুলোও আল্লাহরই সৃষ্টি।
.
#নবীগণ_শহীদগণ
.
সহীহ বর্ণনা থেকে প্রমাণিত আছে যে নবীগণ আলাইহিমুসসালাম কবরে জীবিত থাকেন। সেগুলো বারযাখের বিশেষ ধরনের জীবন। সাধারণ মুমিন কবরে ঘুমিয়ে থাকে। সকাল সন্ধ্যায় তাদেরকে জান্নাত-জাহান্নাম দেখানো হয়। আর নবীগণ আল্লাহর আদেশে বারযাখের বিশেষ জীবন যাপন করেন। সেখানে তাঁরা ইবাদাতে মগ্ন থাকেন। নবীদের দেহ ভক্ষণ করা মাটির জন্য হারাম। রাসূলুল্লাহর উপর দরুদ পড়া হলে ফেরেশতাগণ তাঁর কাছে সে খবর নিয়ে যান। বলেন "অমুকের সন্তান তমুক আপনাকে সালাম জানিয়েছেন।" রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জবাব দিয়ে থাকেন। বিশেষ করে জুমুআর দিন বেশি করে দরুদ পড়তে বলা হয়েছে।
.
শহীদগণের আত্মা জান্নাতে সবুজ পাখির অন্তরে থেকে জান্নাতের নদী থেকে পান করে, সেখানকার ফল খায়, আরশের ছায়ায় ঝুলন্ত স্বর্ণনির্মিত স্থানে বিশ্রাম নেয়। উহুদে শহীদ হওয়া সাহাবাগণের ব্যাপারে এরকম এক বর্ণনায় বলা হয়েছে, তাঁরা এসব নিয়ামাত ভোগ করার পর বলেছেন "আমাদের পক্ষ থেকে আমাদের ভাইকে কে জানিয়ে দেবে যে আমরা জান্নাতে জীবিত আছি এবং রিযিক পাচ্ছি? যাতে তারা জিহাদ পরিত্যাগ না করে এবং ময়দান থেকে পিছু না হটে।" আল্লাহ বললেন, "আমি তোমাদের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেবো।" হাদীসটি আছে আহমাদ ও আবু দাউদে।
.
(চলবে ইনশাআল্লাহ...)
.
সহায়ক গ্রন্থ: আল-হায়াত ফিল বারযাখ (শায়খ মুহাম্মাদ মুস্তাফা আল-জিবালি)
.
#BarzakhErJibon



     
 
what is notes.io
 

Notes.io is a web-based application for taking notes. You can take your notes and share with others people. If you like taking long notes, notes.io is designed for you. To date, over 8,000,000,000 notes created and continuing...

With notes.io;

  • * You can take a note from anywhere and any device with internet connection.
  • * You can share the notes in social platforms (YouTube, Facebook, Twitter, instagram etc.).
  • * You can quickly share your contents without website, blog and e-mail.
  • * You don't need to create any Account to share a note. As you wish you can use quick, easy and best shortened notes with sms, websites, e-mail, or messaging services (WhatsApp, iMessage, Telegram, Signal).
  • * Notes.io has fabulous infrastructure design for a short link and allows you to share the note as an easy and understandable link.

Fast: Notes.io is built for speed and performance. You can take a notes quickly and browse your archive.

Easy: Notes.io doesn’t require installation. Just write and share note!

Short: Notes.io’s url just 8 character. You’ll get shorten link of your note when you want to share. (Ex: notes.io/q )

Free: Notes.io works for 12 years and has been free since the day it was started.


You immediately create your first note and start sharing with the ones you wish. If you want to contact us, you can use the following communication channels;


Email: [email protected]

Twitter: http://twitter.com/notesio

Instagram: http://instagram.com/notes.io

Facebook: http://facebook.com/notesio



Regards;
Notes.io Team

     
 
Shortened Note Link
 
 
Looding Image
 
     
 
Long File
 
 

For written notes was greater than 18KB Unable to shorten.

To be smaller than 18KB, please organize your notes, or sign in.